
রোহিঙ্গা সংকট: সমাধান কোন্ পথে
রাখাইন রাজ্য
সাবেক নাম: আরাকান, বার্মার একটি প্রদেশ। আয়তন: ৩৬,৭৬২ বর্গকিলোমিটার অবস্থান: পশ্চিম উপকুলে অবস্থিত। উত্তরে- চীন, পূর্বে- ম্যাগওয়ে অঞ্চল, ব্যাগো অঞ্চল এবং আয়েইয়ারওয়াদী অঞ্চল, পশ্চিমে-বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ। আরাকান পর্বত রাখাইনকে মূল বার্মা থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। রাখাইন রাজ্যে চেদুবা এবং মাইঙ্গান দ্বীপের মতো বড় কিছু দ্বীপ আছে। জনসংখ্যা: মোট-৩১,১৮,৯৬৩ জনসংখ্যার ঘনত্ব: ৮৫/কিমি (২২০/বর্গমাইল) ধর্ম: ইসলাম, তেরবাদী বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্ম এবং অন্যান্য রাজধানী: সিত্তে ভাষা: রা-খাই-প্রে-নি মূখ্যমন্ত্রী: মাং মাং ওহন (মিলিটারী)
রোহিঙ্গা জনবসতির সুত্রপাত
৮ম শতাব্দি পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাস পাওয়া যায়। তখন সাগর পথে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে আরাকানে মুসলিমদের বসবাস শুরু হয়। আরব বংশোদ্ভূত এই জনগোষ্ঠী মধ্য আরাকানের ম্রক-ইউ ও কাইয়্যূকতা অঞ্চলে বেশী বসবাস করতেন। এখানকার মুসলিমরা পরবর্তীতে রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। জাতিসংঘের মতে, জাতিগত নিধনজ্ঞের শিকার হওয়া বিশে^র সবচেযে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হরো রোহিঙ্গারা। মায়ানমারের রোসাং এর অপভ্রংশ রোহাং এলাকায় এ জনগোষ্ঠির বসবাস থাকায় এদের নাম রোহিঙ্গা হয়ে থাকতে পারে। ধারণা করা হয় খৃষ্টপূর্ব ১৫০০ বছর পূর্বে পূর্ব ভারত থেকে অস্ট্রিক জাতির একটি শাখা কুরুখ নৃগোষ্ঠি রাখাইনে প্রথম বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠি এখানে আসে। তাদের শংকরজাত গোষ্ঠি হলো এই রোহিঙ্গারা যারা এখানের আদি ভূমিপুত্র জাতি। ১০৪৪ সালে কট্টর বৌদ্ধ বর্মী রাজা আনাওহতা আরাকান থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে সেখানে বর্বর মগ সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বৌদ্ধ বসতি স্থাপন করে। মগদের কাজ দস্যুবৃত্তি।
সম্রাট নারামেখলা
আরাকানের সম্রাট নারামেখলা (১৪৩০-১৩৩৪)-এর শাসনামলে আরাকানে বাঙালীদের বসবাসের প্রমাণ মেলে। ২৪ বছর বাংলায় নির্বাসিত থাকার পর বাংলার সুলতানের সামরিক সহায়তায় তিনি পুনরায় আরাকানের সিংহাসনে আরোহন করতে সক্ষম হন। যে সব বাঙালী সম্রাটের সাথে এসেছিল তারা আরাকানে বসবাস শুরু করে। সম্রাট নারামেখলা বাংলার সুলতানের দেয়া কিছু অঞ্চলসহ আরাকানের ওপর সার্বভৌমত্ব অর্জন করেন। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং বাংলার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আরাকানে বাংলার ইসলামী স্বর্ণমুদ্রা চালু করেন।
সুলতান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ শাহ
১৪৩৩ সালে সুলতান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ শাহ মৃত্যুবরণ করেন। ১৪৩৭ সালে সম্রাট নারামেখলার উত্তরাধীকারীরা বাংলার রামু দখল করেন নেয়। ১৪৫৯ সালে তারা চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম বাংলার দখলে চলে আসে।
আরাকানে মুসলিমদের অবস্থান
আরাকান বৌদ্ধদের দখলে চলে যায়। ১৭ শতকের দিকে আরাকানে বাঙালী মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বৌদ্ধ রাজারা কর্মদক্ষতার কারণে আরাকানের গুরুত্বপুর্ণ পদে তাদেরকে নিয়োগ দিতেন। বিংশ শতাব্দির শেষের দিকে নির্যাতন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রোহিঙ্গা মুসলিমরা আইন প্রণেতা ও সংসদ সদস্য হিসেবে মায়ানমারের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
বর্মিদের দখল
১৭৮৫ সালে বর্মিরা আরাকান দখল করে নেয় এবং মুসলমানদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। ১৭৯৯ সালে ৩৫ হাজারেরও বেশী মুসলমান পালিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলে এসে বসবাস শুরু করে।
ব্রিটিশ শাসনামল
১৮২৪ সালে ব্রিটিশরা আরাকান দখল করে নেয় এবং বাংলা ও আরাকান একাকার করে ফেলে। পরবর্তী ১০০ বছর রোহিঙ্গারা স্বস্তিতে ছিল। ১৮৯১ সালে আরাকানে ৫৮,২৫৫ জন মুসলিম ছিল। ১৯১১ সালে আরাকানের মুসলিম সংখ্যা হয় ১,৭৮,৬৪৭ জন। আরাকানে বৌদ্ধদের সাথে মুসলমানদের শত্রুতা দীর্ঘদিনের। ১৯৩৯ সালে মুসলিম ও বৌদ্ধদের শত্রুতা অবসানের চেষ্টায় কমিশন গঠন করে ব্রিটিশ সরকার। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশরা আরাকান ছেড়ে চলে যায়।
জাপানী দখলদারিত্ব
দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় জাপানীরা বার্মা আক্রমন করে। ১৯৪২ সালে আরাকান জাপানীদের অধীনে চলে যায় যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ব্রিটিশরা বার্মা ছাড়লে মুসলমানরা কোনঠাসা হয়ে যায়। তারা ব্রিটিশদের সহযোগী ছিল। মগ ও জাপানীরা হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যা করেছিল। এ সময় প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলায় আশ্রয় নেয়।
বার্মার স্বাধীনতা
১৯৪৫ সালে ব্রিটিশরা আবার আরকান দখল করে নেয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির সময় রোহিঙ্গারা পাকিস্তানের সাথে থাকতে চায়। কিন্তু জিন্নাহ এতে রাজি হননি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী মায়ানমার স্বাধীনতা লাভ করে। আরাকানকে স্বাধীন করার জন্য রোহিঙ্গারা মুসলিম পার্টি গঠন করে। স্বাধীনতার পর মগরা রোহিঙ্গাদের বহিরাগত হিসেবে আখ্যায়িত করে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও উচ্ছেদে মেতে ওঠে। ১৯৬২ সালে সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে রোহিঙ্গাদের ওপর চরমভাবে নির্যাতন শুরু করে। ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে দুইবার তাদের ওপর সামরিক অভিযান চালানো হলে ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
মায়ানমারের স্বাধীনতায় মুসলমানদের অবদান
স্বাধীনতার প্রাক্কালে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি ছিল। এ জনগোষ্ঠির কযেকজন পদস্থ কর্মকর্তাও ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দু ছিল রেঙ্গুন বিশ^বিদ্যালয় এবং সেখানের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতো অল রেঙ্গুন স্টুডেন্ট ইউনিয়ন যার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এম এ রাশিদ। অং সান সুচির বাবা অং সানের প্রধান রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন এই রাশিদ। তিনি ছিলেন রাশিদের সিনিয়র। অং সান যখন রেঙ্গুন বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হন, রশিদ সেবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে মিয়ানমারের খসড়া সংবিধান রচনা করেন এই রশিদ। রশিদ পরে দেশটির শ্রমমন্ত্রীও হন। অং সানের আরেকজন রাজনৈতিক সহযোগী ছিলেন মিয়ানমার মুসলিম লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক। তিনি স্বাধীন মিয়ানমারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হয়েছিলেন।
মায়ানমারের উল্লেখযোগ্য মুসলিম নেতা
এম এ রাশিদ: অল রেঙ্গুন স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অং সান সুচির বাবা অং সানের প্রধান রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন এই রাশিদ। তিনি ছিলেন রাশিদের সিনিয়র। অং সান যখন রেঙ্গুন বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হন, রাশিদ সেবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে মিয়ানমারের খসড়া সংবিধান রচনা করেন এই রাশিদ। রাশিদ পরে দেশটির শ্রমমন্ত্রী হন।
আব্দুর রাজ্জাক: অং সানের অন্যতম রাজনৈতিক সহযোগী ছিলেন। তিনি ছিলেন মিয়ানমার মুসলিম লীগের সভাপতি। পরে স্বাধীন মিয়ানমারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হন।
সুলতান মাহমুদ: আরাকান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য
আবুল বাসার: আরাকান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য
আব্দুল গফফার: আরাকান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য
জোহরা বেগম: আরাকান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য
উ কো নি: মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও অংসান সুচির প্রধান আইন উপদেষ্টা। সেনাবাহিনী যখন নাগরিকত্ব আইনের ফ্যাঁকড়া বাধিয়ে নির্বাচনে জয়ী অং সান সুচির প্রেসিডেন্টন হওয়া ঠেকিয়ে দেয়, তখন উপায় বের করেন উ কো নি। তিনি সেনাবাহিনীর তৈরী করা সংবিধানের ফাঁক বের করে স্টেট কাউন্সিলর পদ বের করার পরামর্শ দেন। সুচি বর্তমানে সেই পদে সমাসীন। ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারী তাকে হত্যা করা হয়।
মায়ানমারে মুসলমানের সংখ্যা
১৯৬৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ রোহিঙ্গা মুসলিমকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ জনসংখ্যার নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির অবশিষ্ট মাত্র ৩ লাখ আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের দ্বারা অবরুদ্ধ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
কোন দেশে কত রোহিঙ্গা
মায়ানমার: বর্তমানে ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নাগরিকত্বহীন অবস্থায় মায়ানমারে বসবাস করছে।
বাংলাদেশ: ১৫ লাখ
ভারত: ৪০ হাজার
পাকিস্তান: সাড়ে ৩ লাখ
সৌদী আরব: ২ লাখ
মালয়েশিয়া: দেড় লাখ
ইন্দোনেশিয়া: ১ হাজার
সংযুক্ত আরব আমিরাত: ১০ হাজার
থাইল্যান্ড: ১ লাখ
যুক্তরাষ্ট্র: ১২ হাজার
নেপাল: ২ শ
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দেশ- ১ লাখ
অন্যান্য দেশে: ১০ লাখ প্রায় যারা ১৯৭০ দশক থেকে দেশ ছাড়া শুরু করেছে।
মায়ানমারের মুসলমানদের সংগঠন
১) আরাকান রোহিঙ্গা জাতীয় সংস্থা
২) মিয়ানমার মুসলিম লীগ
৩) আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা): বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপ যারা আরাকানের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এরা আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তবে এদের কর্মকান্ড তেমন চোখে পড়ে না।
সংকটের ধারাবাহিকতা
ব্রিটিশ শাসনাধীনে থাকার সময় ব্রিটিশ সরকার মিয়ানমারে ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠির তালিকা প্রস্তুত করে। ভুলক্রমে রোহিঙ্গাদের নাম সেই তালিকায় আসেনি। দেশটি স্বাধীন হলে বিভিন্ন সরকার রোহিঙ্গাদেরকে সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে না।
১৯৪৮: স্বাধীন বার্মা রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের ওপর চলছে নির্মম নির্যাতন।
১৯৬২: জেনারেল নে উইন ক্ষমতা দখল করেই রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু করে নির্যাতনের নতুন মাত্রা।
১৯৭০: নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে রোহিঙ্গা মুসলিমরা দেশ ছাড়তে শুরু করে।
১৯৮০: আইন করে রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিকত্ব অর্জনের সুযোগ রোহিত করা হয়েছে।
১৯৮২: নাগরিকত্ব আইন পাশ হয় যেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।
২০০৮: সংবিধান সংশোধন করে সেনাবাহিনী বিশেষ ক্ষমতা নেয়। তারা স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রনালয় পরিচালনা করে। সংসদে তাদের ২৫% আসন বরাদ্ধ রয়েছে এবং তাদের মধ্য থেকে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি থাকবেন।
২০১২: বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। এ সময় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় চলে যান।
২০১৭: রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়া কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মায়ানমার তখন স্মরণকালের ভয়াবহতম নির্যাতন চালায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর। গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও নৃশংস নির্যাতন চালানো হয় নারী, শিশুসহ সর্বস্তরের মুসলমানদের ওপর। পাঁচ লক্ষাধিক মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনকারী শ্রেণী
১) সেনাবাহিনী: ১৯৭৮, ১৯৯১-৯২, ২০১২, ২০১৫, ২০১৬-১৭
২) আইন-শৃংখলা বাহিনী
৩) বেসামরিক সশস্ত্র গোষ্ঠি
৪) উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গ্রুপ
নির্যাতনের ধরণ
আন্দোলনের স্বধীনতা নিষিদ্ধ রাষ্ট্রীয় শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ নেই সরকারী চাকরি হয় না বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করা ভোটাধিকার নেই নামাজ আদায়ে বাধা দেয়া হত্যা: ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা, পেট কেটে হত্যা, পুড়িয়ে হত্যা, টুকরো টুকরো করে হত্যা, হত্যার পর মাংস রেধে খাওয়া, মাথার মগজ বের করে নেয়া, হার্ট বের করে ফেলা ধর্ষণ সম্পত্তি কেড়ে নেয়া বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা চিকিৎসা কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া বিয়ে করার অনুমতি নেই সন্তান হলে নিবন্ধন নেই জাতিগত পরিচয় প্রকাশে বাধাদান সন্তান উৎপাদনে বিধিনিষেধ (রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রডাক্টিভ জাতি) বাড়িঘর ইচ্ছে হলে পুড়িয়ে দেয়া
নির্যাতনের কারণ
১) ধর্মীয় বিদ্বেষ ও বৈষম্য
২) মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের পুরোপুরী বিতাড়ন করে তাদের সম্পদ দখল করা
৩) আরাকান প্রদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব বেশী হওয়ায় চীন ও ভারত এই জায়গা খালী করতে সরকারকে উৎসাহ দেয়।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার কী ভাবনা/পদক্ষেপ
দেশ
অস্ট্রিয়া: সিডনীতে বিক্ষোভ হয়।
ইন্দোনেশিয়া: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দেশটি ভূমিকা রাখতে চায় (পররাষ্ট্র মন্ত্রী/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭)।
ইরান: বিক্ষোভ করে। মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কথা বলেন।
কাজাখস্তান: নিন্দা জানায়।
কানাডা: প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দুত বব রে ঢাকার কানাডা ক্লাবে সাংবাদিকদের বলেছেন রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। তারা মিয়ানমারের ওপর সামরিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারা মিয়ানমারের কাছে কোন সমরাস্ত্র বিক্রি করবে না।
কুয়েত: নিন্দা জানায়।
গাম্বিয়া: রোহিঙ্গা ইস্যুকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিতে চায়।
তিউনিশিয়া: নিন্দা জানায়।
তুরষ্ক: প্রেসিডেন্ট সুচিকে ফোন করে নিন্দা জ্ঞাপন করেন (৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭)।
পাকিস্তান: প্রেসিডেন্ট পদক প্রত্যাহারের আহবান।
ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যক্রোঁ নিন্দা জানান।
ব্রিটেন: সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান স্থগিত করেন।
মালয়েশিয়া: বিক্ষোভ করে ও নিন্দা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র: নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ (৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলিষ্ঠ ও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: নিন্দা জানায়।
সৌদি আরব: গণহত্যা বন্ধের আহবান জানান (১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)।
সংস্থা
আরব লীগ: নিন্দা জানায় (৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭)।
জাতিসংঘ: মহাসচিব রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান করতে বলেন (৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭)।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: নেতারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে উত্তেজনা প্রশমনের তাগিদ দেন (৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭)।
চেঞ্জ ডট ওআরজি: সুচির নোবেল পুরষ্কার বাতিলের দাবী ৪ লাখ ৫ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট: গণহত্যা বন্ধের আহবান জানায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ: নিরাপত্তা পরিষদকে মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহবান জানায়।
ব্যক্তি
ডেসমন্ড টুটু (দক্ষিণ আফ্রিকা) : নিন্দা জানান।
দালাইলামা (তিব্বত): নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
জোডি উইলিয়ামস, নোবেল বিজয়ী: নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
শিরিন এবাদী, নোবেল বিজয়ী: নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
লেইমাহ বোয়ি, নোবেল বিজয়ী: নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
মালালা ইউসুফজাই, নোবেল বিজয়ী: নিন্দা জ্ঞাপন ও সুচির সমালোচনা করেন।
অমর্ত্য সেন, নোবেল বিজয়ী: নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
কৈলাস সত্যার্থী, নোবেল বিজয়ী: সুচিকে নিজ উদ্যোগে নোবেল ফিরিয়ে দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন।
পোপ ফ্রান্সিস: রোগিঙ্গাদেরকে ভাই হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
মমতা ব্যানার্জী (পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী, ভারত): ভারতে আশ্রয় গ্রহনকারী রোহিঙ্গাদেরকে পুশব্যাক না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ইলা গান্ধি (দক্ষিণ আফ্রিকা): সুচিকে লেখা চিঠিতে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের আহবান জানান।
ইদ্রিস ইসমাজিক (সেব্রেনিসা, বসনিয়া): রোহিঙ্গাদেরকে সেব্রেনিসা গণহত্যার সাথে তুলনা করেন।
এ্যাঞ্জেলিনা জলি (যুক্তরাষ্ট্র): নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
আমির খান (ভারত): নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
হুসেইন মোহাম্মদ (ব্রিটিশ নাগরিক): সুচীকে আইনের মুখোমুখী করতে কাজ করেন।
নাজমা মোহাম্মদ (ব্রিটিশ নাগরিক): সুচীকে আইনের মুখোমুখী করতে কাজ করেন।
আইনগত প্রতিকার
আন্তর্জাতিক আদালত: ১৭৮৫ সালে বেদখল হওয়া স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্র রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে পারে। কেননা রাষ্ট্র বেদখলের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে। কোন ব্যক্তি যেহেতু আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে পারে না, সেহেত ুক্ষতিগ্রস্থ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এ মামলা করতে পারে।
আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালত (আইসিসি): মায়ানমারে গণহত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালতে মামলা করতে পারে বাংলাদেশসহ যে কোন দেশ। আইসসি সনদের (রোম স্টাটিউট অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট)-এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে এই আদালত গণহত্যার অপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আগ্রাসনের বিচার করতে পারে। অনুচ্ছেদ ৭ অনুসারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলতে হত্যা, নিধন, দাসত্ব, নির্বাসন বা জোরপূর্বক কোন জনগোষ্ঠিকে স্থানান্তর করা, বন্দিত্ব, নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, পতিতাবৃত্তি, গুম, জাতিগত হিংসা বা বিদ্বেষ ইত্যাদি বোঝায় যা মিয়ানমার সবই করেছে। নুরেমবার্গ, টোকিও, যুগোশ্লাভিয়া, রুয়ান্ডা ও সিয়েরা লিওন সনদেও এগুলো মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। এসব অপরাধের বিচার করার নজির আছে। মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হলেও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক প্রেরিত হলে তার বিরুদ্ধে আইসিসি বিচার করতে পারবে।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের পাশে কোন্ কোন্ দেশ
অস্ট্রিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাজাখস্তান, কানাডা, কুয়েত, গাম্বিয়া, তিউনিশিয়া, তুরষ্ক, পাকিস্তান, ফ্রান্স, ব্রিটেন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব
মিয়ানমারের পক্ষে কারা
চীন, ভারত, রাশিয়া, বলিভিয়া। চীন সরাসরি সমর্থন দেয়। ভারত দেয় পরোক্ষভাবে। জাতিসংঘের আওতায় মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে চীন ও রাশিয়া রাজি হয় না।
চীন কেন মায়ানমারের পক্ষে
১) অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা চীনের পররাষ্ট্রনীতির অংশ।
২) চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও তেল-গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে মালাক্কা প্রণালী ছাড়াও মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে আরেকটি স্থল পথকে অক্ষুন্ন রাখতে চায় চীন।
৩) আরাকানের ভেতর দিয়ে চীন দুটি পাইপ লাইন বঙ্গোপসাগরে নিয়ে গেছে। এজন্য চীন চায় না আরাকানের ওপর মায়ামারের কর্তৃত্ব হারাক।
৪) রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন যদি সমর্থন দেয় তাহলে তিব্বত ও শিনজিয়াং প্রদেশের সমস্যা সমাধানে অন্যের হস্তক্ষেপ আসতে পারে।
৫) গত দু’দশক ধরে চীনের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্র পথে হচ্ছে। সেই বাণিজ্য মিয়ানমারের মালাক্কা প্রণালী দিয়ে হয়। এই মালাক্কা প্রণালীর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নজর আছে। এটাকে চীন হারাতে চায় না।
৬) মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ যে দেশটির সেটি হচ্ছে চীন। গত ৩০ বছরে চীন মিয়ানমারে প্রায় ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের চেয়ে অনেক বেশী। সেজন্য রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের দূর্দশার কথা চীন বিবেচনায় নেয় না। অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও কৌশলগত দিক থেকে মিয়ানমার চীনের কাছে বাংলাদেশের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৭) রোহিঙ্গারা মুসলমান হওয়ায় মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব নিয়েও চীন বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। চীন মুসলিম বিদ্বেষী বলেই মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশে তারা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালায়।
৮) আগে চীনের সাহায্য নিয়ে স্বাধীনতাকামীরা মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিল। পরে সরকার চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সমর্থ হওয়ায় চীন তাদের জায়গায় সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।
ভারতের স্বার্থ
১) ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে মিয়ানমারের কালাদান ও সিটওয়ে বন্দরে।
২) রাখাইন রাজ্যে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরী করছে ভারত।
৩) মিজোরাম থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত সড়ক বানানোর জন্য পরিকল্পনা করছে ভারত।
৪) চীনের প্রভাববলয়ে থাকা জ্বালানী, খনিজ ও বনজ সম্পদে ভরা মিয়ানমারের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাচ্ছে ভারত।
৯) বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ভারত বিশ্বাসী, কেননা ভারত মনে করে বাংলাদেশ নিজেদের প্রয়োজনেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে। সেজন্য রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের দূর্দশার কথা ভারত বিবেচনায় নেয় না। অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও কৌশলগত দিক থেকে মিয়ানমার ভারতের কাছে বাংলাদেশের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৫) রোহিঙ্গারা মুসলমান হওয়ায় মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব নিয়েও ভারত বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে।
৬) ভারত মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রি করে এবং সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়।
রাশিয়ার স্বার্থ
১) রাশিয়া মিয়ানমারে আনবিক শক্তি, সামরিক সরঞ্জামাদী ও প্রযুক্তি রপ্তানী করে।
২) মিয়ানমারে চীনের প্রভাব কমিয়ে রাশিয়া জায়গা করতে চায়।
৩) মায়ানমার চীনের সামরিক সরঞ্জামাদীর অন্যতম ক্রেতা।
৪) মিয়ানমারে রয়েছে রাশিয়ার মিগ কোম্পানীর অফিস।
৫) মিয়ানমারের ছাত্রদের সামরিক শিক্ষা দেয় রাশিয়া।
৬) মিয়ানমারে রাশিয়া খুব শীঘ্রই পারমানবিক চুল্লি নির্মাণ করবে।
৭) রাশিয়ার নজর রয়েছে মিয়ানমারের তেল ও গ্যাসক্ষেত্রগুলোর দিকে। তারা এ উদ্দেশ্যে অফিসও খুলেছে ইয়াঙ্গুনে।
রোহিঙ্গা সংকটের নেতিবাচক প্রভাব
১) অত্র এলাকায় জঙ্গীবাদের সৃষ্টি হবে যার প্রভাব বিশ্বব্যাপী পড়তে পারে।।
২) বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
৩) ভয়াবহ মানবিক বিপর্যায় দেখা দিয়েছে।
৪) বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের বৈরী সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে।
৫) বিশ্বব্যাপী বিরোধপূর্ণ দুইটি বলয় সৃষ্টি হচ্ছে।
সুপারিশমালা
১) স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আরাকানে চীনের বাণিজ্যিক সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে।
২) মায়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গণহত্যার মামলা করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ প্রয়োগ করতে বাংলাদেশকে অন্যান্য মিত্র দেশ, সংস্থা ও ব্যক্তির সহযোগিতা নিতে হবে।
৩) মায়ানমার যে সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য সেখানে চাপ প্রয়োগ করতে হবে মায়ানমারকে সংকটের আশু সমাধানে বাধ্য করতে। প্রয়োজনে তাদের সদস্য পদ বাতিল করাতে হবে।
৪) আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ মায়ানমারকে বিভিন্নভাবে একঘরে করতে হবে।
৫) মায়ামনারের প্রতিবেশী দেশগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে তাদের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে।
৬) মায়ামারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংষ্কার সাধনে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
৭) মায়ানমার থেকে সবদেশের কুটনীতিককে প্রত্যাহার করতে হবে এবং সব দেশ থেকে তাদের কুটনীতিককে বহিষ্কার করতে হবে।
৮) মায়ানমারের সাথে সকল প্রকার বাণিজ্যিক, সামরিক ও কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
৯) ব্রিটিশ সরকার প্রণীত মিয়ানমারে ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠির নাম সম্বলিত তালিকা অবৈধ ঘোষণা করতে হবে এবং সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে নতুন তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
১০) মিয়ানমারের সামরিক সরকার প্রণীত ১৯৮২ সালের সংবিধানকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে এবং সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে রাখতে হবে।
১১) শুধু মিয়ানমারকে বন্ধু রাষ্ট্র ভেবে চীন, ভারত, রাশিয়া বা অন্য কোন রাষ্ট্রের তাদের প্রতি সমর্থন দিলে হবে না, বাংলাদেশের বিষয়টাও তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা বাংলাদেশও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র। এক বন্ধুকে সংকটে ফেলা কাম্য নয়।
১২) রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যেন অত্র এলাকায় কোন রকমের যুদ্ধ, যুদ্ধ পরিস্থিতি বা উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে শুধুমাত্র কুটনৈতিক উপায়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এ্যাডঃ মোঃ ইয়ারুল ইসলাম
মহাসচিব, বাংলাদেশ কংগ্রেস
ফোন- ০১৭১১৪৭৭৯১৫