
শিক্ষা ও রাজনীতি
কৃষি শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষা ইত্যাদির মতো নেতৃত্ব ও রাজনীতি শিক্ষা আবশ্যক। কারণ নেতাদের স্থান থাকে সবার উপরে। নেতারা সবাইকে নিয়ন্ত্রন করেন। পাঠ্যপুস্তকে নেতৃত্ব ও রাজনীতি শিক্ষার অধ্যায় সন্নিবেশিত করলে নেতাদের যোগ্যতা ও মর্যাদা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা অবগত হয়ে নেতৃত্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবে।
শিক্ষা জীবনে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করবে এবং নেতৃত্ব দানের বাস্তব শিক্ষা এখান থেকে গ্রহন করবে। তাদের রাজনীতি হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক। শিক্ষা গ্রহণই তাদের প্রধান ব্রত। শিক্ষার সাথে সাথে তাদেরকে দেশ ও জনগণের সেবাও করতে হবে। তবে তা হতে হবে তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুসারে, কোন রাজনৈতিক দলের নির্দেশনা অনুসারে তাদের সংগঠনের কর্মকান্ড পরিচালিত হবে না। শুধু গ্রন্থগত শিক্ষা গ্রহণ করে সুনাগরিক হওয়া যায় না, পারিপার্শ্বিক শিক্ষার দরকার আছে যা রাজনীতির মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। সরকার বা বৈদেশিক শক্তি যদি দেশ বা জনগণের জন্যে ক্ষতিকর কোন কাজ করে তবে শিক্ষার্থীরা বসে থাকতে পারে না। তাদেরকে প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে, তবে তা হবে নিতান্তই দেশ ও জনস্বার্থে, কোন অবস্থায়ই নিজেদের স্বার্থে তা হবে না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংগঠন থাকবে যা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, শিক্ষার মান বা পরিবেশগত উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত হবে। নেতৃত্ব ও নৈতিকতার চর্চাই হবে শিক্ষার্থীদের রাজনীতির উদ্দেশ্য। শিক্ষা জীবনে ছন্দ পতন ঘটেছে এমন অনিয়মিত ছাত্ররা সংগঠনের নেতৃত্বে থাকবে না। পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনের পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনগুলোও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারেও সোচ্চার থাকবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী কোন কর্মকান্ড ঘটতে দেখলে তা রোধে সংগঠনগুলি যথাসাধ্য ভূমিকা গ্রহণ করবে। তবে জনগণের স্বার্থরক্ষার নামে ধ্বংষাত্মক কোন কাজের মাধ্যমে জনস্বার্থের জন্যে ক্ষতিকর কোন কাজ সংগঠনগুলি করবে না।
বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের ছাত্র ও পেশাজীবী সমাজের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আজ এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা থাকলেও সেটা তাদের একক কৃতিত্ব ছিল না, জণগনের সাধারণ দাবীর সাথে একাত্ম হয়ে নাগরিক হিসেবে তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছে এবং জণগনের সেখানে প্রত্যক্ষ সমর্থন ও অংশ গ্রহণ ছিল। ছাত্র সমাজ তাদের অতীতের জাতীয় অর্জনকে পূঁজি করে পরবর্তীতে তারা এদেশে জাতীয় রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহনের লাইসেন্স করে নেয়। যারা ছাত্র রাজনীতির পক্ষে কথা বলেন, তারা অতীতে ছাত্র সমাজের অর্জনের দোহাই দেন, যদিও তারা হয় ছাত্র রাজনীতির সুবিধাভোগী অথবা এর পরিণতি সম্পর্কে কোন গভীর উপলব্ধি ছাড়াই এর পক্ষে সাফাই গান। প্রগতিশীল উন্নত জাতি গনের ক্ষেত্রে বর্তমান ধারার ছাত্র রাজনীতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। রাজনীতিবিদরা ছাত্রদেরকে কেবল ব্যবহার করে নিজেরা সুবিধা গ্রহণ করার জন্যে। কিন্তু এর ভয়াবহ পরিণতির কোন সমাধান তারা দেন না। অপর দিকে ছাত্ররা রাজনীতি করতে গিয়ে তাদের পড়াশোনায় উদাসীন হয়ে যায়। অসদোপায় অবলম্বন করে পাশ করলেও মেধার বিকাশ ঘটে না।
ছাত্রদের কাজ হচ্ছে কর্মযোগ্যতা অর্জন করা। এরজন্য প্রথম দরকার তাদের ওপর অর্পিত পড়াশোনার দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে কর্মের সনদ অর্জন করা। তবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা থেকে তারা মুক্ত নয়। ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে সদাচরণ, সততা, দক্ষতা, নম্রতা, ভদ্রতা, নিষ্ঠা, ত্যাগ প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলী অর্জন করা। পারিবারিক দায়বদ্ধতা বলতে বোঝায় কোন প্রতিদানের আশা না করে শ্রম, অর্থ বা পরামর্শ দিয়ে পরিবারকে সাধ্যমত সহায়তা করা। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা হচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূখর থাকা।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা একজন ছাত্রের একক প্রচেষ্টার ব্যাপার। কিন্তু সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রতিবাদমূখর হওয়া কোন ছাত্রের একার কাজ নয়। এখানে দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সংগঠন। এই কাজকে ছাত্র রাজনীতি বলে। তাই ছাত্ররা রাজনীতি করবে। শিক্ষার সাথে সাথে তাদেরকে দেশ ও জনগণের সেবাও করতে হবে।
মোঃ ইয়ারুল ইসলাম